ক্ষিদেয় পেট জ্বলছে আর গরমে মাথা। আমরা তিন বন্ধু সপরিবারে বসে আছি লাখনৌর স্বনামধন্য টুন্ডে রেস্তোরায়।যদিও সেটা সপ্তমী কিন্তু বাইরে ৪০ এর উপর temparature আর এই আন্ডারগ্রউন্ড ফ্লোর এর AC র উপস্থিতি প্রায় বোঝাই দায়। এই পরিস্তিতিতে টেবিলে এসে পড়লো কয়েক প্লেট গরম গালায়াতি বিফ আর মটন কাবাব, সঙ্গে কয়েকটা উল্টে তাওয়া পরোটা। নরম পরোটায় জড়িয়ে কাবাব তা মুখে পড়তেই সকাল থেকে face করা সমস্ত বিরক্তিকর ঘটনা মন থেকে মুছে গেলো। মনে হলো এযাত্রা সার্থক।
একদিন আগে ষষ্ঠীর দিন সন্ধে ৬.৩০ তে আমি আর আমার বৌ indigo ফ্লাইট এ চেপে লক্ষ্নৌর পথে যাত্রা শুরু করলাম। শুরুটা খুব একটা smooth হলো না একটা coffee accident আর বিরক্তিকর ফ্লাইট delay র কারণে।যাই হোক প্রায় ৯.৪৫ এ নেমে একটা প্রিপেইড ট্যাক্সি করে আমাদের হোটেল এ পৌঁছলাম প্রায় ১০.৩০। আমরা উঠেছিলাম চারবাগ রেল স্টেশনএর পাশে Hotel Mohan এ। পরিষ্কার পরিছন্ন হোটেল তবে একটু overpriced বিশেষ করে খাবারের দিক থেকে। আমার স্কুলের বন্ধু ছোটো ওর বৌ মহুয়া আর মেয়ে কুহুকে নিয়েই সেদিন বিকেলে ট্রেন এ পৌঁছে গেছিলো। পরের দিন সকাল সকাল আমার tour party র বাকি মেম্বার পিকি ওর বৌ শকুন্তলা আর ছেলে রোদ্দুর কে নিয়ে হায়দরাবাদ থেকে পৌঁছে গেলো। ব্রেকফাস্ট করে আমরা শহর ভ্রমণএ বেরোলাম।চারবাগ এর অটো স্ট্যান্ড থেকে একটা vikram অটো (কলকাতার হেকে বেশ বড় ) এ চেপে অলি গলি পেরিয়ে এলাম বড়ো ইমামবাড়া র কাছের স্ট্যান্ড এ। পাশেই কোথাও দুর্গাপুজোর জন্য মাইকে মন্ত্র শোনা যাচ্ছিলো। অক্টোবর মাসেও বেশ গরমের মধ্যে আমরা হেটে হেটে রাস্তা ভুল করে ইমামবাড়া র এক চক্কর কেটে মাইন্ গেটে পৌঁছে শুনলাম মাহরাম এর জন্য ইমামবাড়া বন্ধ পরে খুলবে। ছেলেবেলায় লখনৌ এসেও ইমামবাড়া দেখা হয়নি। সেকথা মনে করে হতাশ হয়ে পড়লাম। যাই হোক দুটো টাঙ্গা গাড়ি ভাড়া করে রুমী দরওয়াজা ক্লক টাওয়ার দেখে নিলাম। ফিরে এসেও দেখি ইমামবাড়া বন্ধ আর এদিকে প্রায় ৩ বাজে। শেষমেশ একটা টোটো ভাড়া করে কোনোক্রমে ভীড় ঠেলে পৌঁছলাম টুন্ডে। এর পরের গপ্পো দিয়েই লেখা শুরু। টুন্ডে থেকে বেরিয়ে প্রকাশ বলে বিখ্যাত দোকানের কুলফি দিয়ে মিষ্টিমুখ করে ঘরে ফেরা হলো।
পরের দিন ভোরবেলা উঠেই আমাদের সামনের মিষ্টির দোকান থেকে জিলিপি দিয়ে দিন শুরু হলো। আজকে আমরা সোজা গেলাম ছোট ইমামবাড়া। খুব বিশেষ কিছু না হলে বেশ সুন্দর সাজানো একটা স্মৃতিসৌধ। এখানে গাইড নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ভেতরে নানা রঙের ঝাড়বাতিগুলো খুব সুন্দর। সেখান থেকে ফটো গ্যালারি আর ক্লক টাওয়ার দেখা হলো। এগুলো বাদ দিলে কেউ কিছু miss করবে না। এরপর আমরা গেলাম seva চিকনকারী র দোকান। comfortably বসে চিকন এর কাজ দেখতে চাইলে এটা ভালো জায়গা। একটু বেলা করে প্রায় বিকেল এ আমরা লাঞ্চ করতে গেলাম নৌশিজান বলে একটা রেস্টুরেন্টে। এখানকার কাঁকড়ি কাবার তা অদ্ভুত সুন্দর ছিল। সেখান থেকে সোজা আম্বেদকর পার্ক। একটা সুবিশাল জায়গায় প্রচুর টাকা খরচ করা বানানো এখানকার স্থাপত্যের এক নিদর্শন। খুবই সুন্দর তবে ভাল করে দেখতে অনেক সময় লাগতো। আমরা কিছুক্ষন ঘুরে হোটেল ফিরে এলাম।
পরের দিন সকালে বেরিয়ে আমরা লখনও ফিরলাম আবার ৪ দিন পরে। সেদিন বিকেলেই অবশ্য আমরা ফেরার প্লেন ধরলাম। সেদিনের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ছোটোদের প্লেনের টিকেট এ দিন কে রাত্রি করে দেয়া আর দস্তারখান থেকে অপূর্ব লাঞ্চ। সন্ধ্যেবেলা প্লেনে বসে ভেবে দেখলাম লখনও আর কিছুর জন্য মনে থাকুক আর না থাকুক এখানকার অবধী রান্না কোনোদিন ভোলার নয়। আমরা কলকাতার লোকেরা এখানকার বিরিয়ানি নিয়ে খুব গর্ব করি কিন্তু আমার অকপট স্বীকারোক্তি আমার খাওয়া সেরা বিরিয়ানির মধ্যে ইদ্রিস সবার উপর থাকবে। আর সেকারণেই হয়তো লখনৌ আবার কোনোদিন টেনে নিয়ে আসবে।