Sunday, November 20, 2016

Nawabkhana

ক্ষিদেয় পেট জ্বলছে আর গরমে মাথা। আমরা তিন বন্ধু সপরিবারে বসে আছি লাখনৌর স্বনামধন্য টুন্ডে রেস্তোরায়।যদিও সেটা সপ্তমী কিন্তু বাইরে ৪০ এর উপর temparature আর এই আন্ডারগ্রউন্ড  ফ্লোর এর AC র উপস্থিতি প্রায় বোঝাই দায়।  এই পরিস্তিতিতে টেবিলে এসে পড়লো কয়েক প্লেট গরম গালায়াতি বিফ আর মটন কাবাব, সঙ্গে কয়েকটা উল্টে তাওয়া পরোটা।  নরম পরোটায় জড়িয়ে কাবাব তা মুখে পড়তেই সকাল থেকে face করা সমস্ত বিরক্তিকর ঘটনা মন থেকে মুছে গেলো। মনে হলো এযাত্রা সার্থক।

একদিন আগে ষষ্ঠীর দিন সন্ধে ৬.৩০ তে আমি আর আমার বৌ indigo ফ্লাইট এ চেপে লক্ষ্নৌর পথে যাত্রা শুরু করলাম। শুরুটা খুব একটা smooth হলো না একটা coffee accident আর বিরক্তিকর ফ্লাইট delay র কারণে।যাই হোক প্রায় ৯.৪৫ এ নেমে একটা প্রিপেইড ট্যাক্সি করে আমাদের হোটেল এ পৌঁছলাম প্রায় ১০.৩০।  আমরা উঠেছিলাম চারবাগ রেল স্টেশনএর পাশে Hotel Mohan এ। পরিষ্কার পরিছন্ন হোটেল তবে একটু overpriced বিশেষ করে খাবারের দিক থেকে। আমার স্কুলের বন্ধু ছোটো  ওর বৌ মহুয়া আর মেয়ে কুহুকে নিয়েই সেদিন বিকেলে ট্রেন এ পৌঁছে গেছিলো। পরের দিন সকাল সকাল আমার tour party র বাকি মেম্বার পিকি ওর বৌ শকুন্তলা আর ছেলে রোদ্দুর কে নিয়ে হায়দরাবাদ থেকে পৌঁছে গেলো। ব্রেকফাস্ট করে আমরা শহর ভ্রমণএ বেরোলাম।চারবাগ এর অটো স্ট্যান্ড থেকে একটা vikram অটো (কলকাতার হেকে বেশ বড় ) এ চেপে অলি গলি পেরিয়ে এলাম বড়ো ইমামবাড়া র কাছের স্ট্যান্ড এ। পাশেই কোথাও দুর্গাপুজোর জন্য মাইকে মন্ত্র শোনা যাচ্ছিলো। অক্টোবর মাসেও বেশ গরমের মধ্যে আমরা হেটে হেটে রাস্তা ভুল করে ইমামবাড়া র এক চক্কর কেটে মাইন্ গেটে পৌঁছে শুনলাম মাহরাম এর জন্য ইমামবাড়া বন্ধ পরে খুলবে। ছেলেবেলায় লখনৌ এসেও ইমামবাড়া দেখা হয়নি। সেকথা মনে করে হতাশ হয়ে পড়লাম। যাই হোক দুটো টাঙ্গা গাড়ি ভাড়া করে রুমী দরওয়াজা ক্লক টাওয়ার দেখে নিলাম। ফিরে এসেও দেখি ইমামবাড়া বন্ধ আর এদিকে প্রায় ৩ বাজে। শেষমেশ একটা টোটো ভাড়া করে কোনোক্রমে ভীড় ঠেলে পৌঁছলাম টুন্ডে। এর পরের গপ্পো দিয়েই লেখা শুরু। টুন্ডে থেকে বেরিয়ে প্রকাশ বলে বিখ্যাত দোকানের কুলফি দিয়ে মিষ্টিমুখ করে ঘরে ফেরা হলো।




পরের দিন ভোরবেলা আমি আর অনন্যা এক চক্কর হেটে নিলাম আমাদের আশপাশ।আগেরদিনের দাবদাহ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এদিন একটা AC Innova তে করে বেরোলাম। কোনো সময় নষ্ট না করে প্রথমেই সোজা বড় ইমামবাড়া। মসজিদ ইমামবাড়া আর শাহী হামাম মিলে বিশাল জায়গা। আমরা লাড্ডু নামের একজন প্রাইভেট গাইড নিয়ে ঘুরে দেখলাম। এই ইমামবাড়া ছাদে রয়েছে ভুলভুলাইয়া নামের বিখ্যাত একটা গোলকধাঁধা। সেখানে নাকি নবাব তার বেগমদের সাথে লুকোচুরি খেলতো।তবে আমাদের কাছে এটার বাড়তি আকর্ষণ সত্যজিৎ রায় এর বাদশাহী আংটি। তবে ভিড় আর চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে একবারের জন্যও গা ছমছমে ভাব টা এলোনা।ইমামবাড়া দেখে বেরোতে বেশ দেরি হলো। আমরা গাড়ি নিয়ে গেলাম ইদ্রিস এর বিরিয়ানির খোঁজে।এক রাস্তার মোড়ে ড্রাইভার নামিয়ে আগের রাস্তা দেখিয়ে বললো ওদিকে পরবে। আমরা তিন বন্ধু মিলে হাঁটতে গিয়ে দেখলাম সেই রাস্তায় হাজার হাজার লোক মহারাম এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনে হলো যেন মহম্মদ আলী পার্ক এর ঠাকুর দেখতে এসেছি। অবশেষে খুঁজে পেলাম ইদ্রিস এর দোকান এর যেটা আমাদের পাড়ার চায়ের দোকান থেকে একটু বড় হবে। খাবার নিয়ে হোটেল এ ফিরে বিরিয়ানি আর মটন কোর্মা মুখে পড়তেই বুঝলাম কেন দোকানের এতো সুনাম। সুবাসিত  বিরিয়ানির সাথে মোলায়েম মটন খেয়ে সবার দিলখুশ হয়ে গেলো। খেয়ে বেরোলাম রেসিডেন্সি দেখতে। সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইংরেজ সেনাদের কোয়ার্টার এর ভাঙাচোরা ধংসাবশেষ সুন্দর করে মেইনটেইন করা আছে। আমরা একটা মাঠের মধ্যে খালি পায়ে সবাই মিলে ঘাসের উপর লুটোপুটি খেলাম কিছুক্ষন। সন্ধ্যে নামতে হোটেল ফেরত। সামনের ধর্মশালার দুর্গাপূজা দেখে একটু ঘরের কথা মনে করে নিলাম।














পরের দিন ভোরবেলা উঠেই আমাদের সামনের মিষ্টির দোকান থেকে জিলিপি দিয়ে দিন শুরু হলো। আজকে আমরা সোজা গেলাম ছোট ইমামবাড়া। খুব বিশেষ কিছু না হলে বেশ সুন্দর সাজানো একটা স্মৃতিসৌধ। এখানে গাইড নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ভেতরে নানা রঙের ঝাড়বাতিগুলো খুব সুন্দর। সেখান থেকে ফটো গ্যালারি আর ক্লক টাওয়ার দেখা হলো। এগুলো বাদ দিলে কেউ কিছু miss করবে না। এরপর আমরা গেলাম seva চিকনকারী র দোকান। comfortably বসে চিকন এর কাজ দেখতে চাইলে এটা ভালো জায়গা। একটু বেলা করে প্রায় বিকেল এ আমরা লাঞ্চ করতে গেলাম নৌশিজান বলে একটা রেস্টুরেন্টে। এখানকার কাঁকড়ি কাবার তা অদ্ভুত সুন্দর ছিল। সেখান থেকে সোজা আম্বেদকর পার্ক। একটা সুবিশাল জায়গায় প্রচুর টাকা খরচ করা বানানো এখানকার স্থাপত্যের এক নিদর্শন। খুবই সুন্দর তবে ভাল করে দেখতে অনেক সময় লাগতো। আমরা কিছুক্ষন ঘুরে হোটেল ফিরে এলাম।

পরের দিন সকালে বেরিয়ে আমরা লখনও ফিরলাম আবার ৪ দিন পরে। সেদিন বিকেলেই অবশ্য আমরা ফেরার প্লেন ধরলাম। সেদিনের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ছোটোদের প্লেনের টিকেট এ দিন কে রাত্রি করে দেয়া আর দস্তারখান থেকে অপূর্ব লাঞ্চ। সন্ধ্যেবেলা প্লেনে বসে ভেবে দেখলাম লখনও আর কিছুর জন্য মনে থাকুক আর না থাকুক এখানকার অবধী রান্না কোনোদিন ভোলার নয়। আমরা কলকাতার লোকেরা এখানকার বিরিয়ানি নিয়ে খুব গর্ব করি কিন্তু আমার অকপট স্বীকারোক্তি আমার খাওয়া সেরা বিরিয়ানির মধ্যে ইদ্রিস সবার উপর থাকবে। আর সেকারণেই হয়তো লখনৌ আবার কোনোদিন টেনে নিয়ে আসবে।